সত্যজিৎ রায়

সত্যজিৎ রায় (২ মে ১৯২১-২৩ এপ্রিল ১৯৯২) ছিলেন একজন ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার, শিল্প নির্দেশক, সংগীত পরিচালক এবং লেখক। তাঁকে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের একজন হিসেবে গণ্য করা হয়। সত্যজিতের জন্ম কলকাতা শহরে সাহিত্য ও শিল্প সমাজে খ্যাতনামা রায় পরিবারে। তার পূর্বপুরুষের ভিটা ছিল তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের কিশোরগঞ্জে (বর্তমানে বাংলাদেশ) কটিয়াদী উপজেলার মসূয়া গ্রামে। তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ ও শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। সত্যজিতের কর্মজীবন একজন বাণিজ্যিক চিত্রকর হিসেবে শুরু হলেও প্রথমে কলকাতায় ফরাসি চলচ্চিত্র নির্মাতা জঁ রনোয়ারের সাথে সাক্ষাৎ ও পরে লন্ডন শহরে সফররত অবস্থায় ইতালীয় নব্য বাস্তবতাবাদী চলচ্চিত্র লাদ্রি দি বিচিক্লেত্তে দেখার পর তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণে উদ্বুদ্ধ হন।

ঋত্বিক ঘটক

ঋত্বিক কুমার ঘটক, যিনি ঋত্বিক ঘটক হিসেবেই সচরাচর অভিহিত, (জন্ম: ৪ নভেম্বর ১৯২৫ - মৃত্যু: ৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৬) বিংশ শতাব্দীর একজন খ্যাতিমান বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক। তার জন্ম অবিভক্ত ভারতের পূর্ববঙ্গের (বর্তমান বাংলাদেশের) রাজশাহী শহরের মিয়াঁপাড়ায় । ছেলেবেলায় কিছুদিন দাদা মণীশ ঘটকের সঙ্গে কলকাতায় ছিলেন তিনি। তখন পড়াশোনা করতেন দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জ রাষ্ট্রীয় উচ্চ বিদ্যালয়ে। পরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রাজশাহী শহরে ফিরে যান তিনি। রাজশাহী শহরের পৈতৃক বাড়িতে শৈশব, কৈশোর ও তারুণ্যের একটি অংশ কাটিয়েছেন। এই বাড়িতে কিছু সময় বসবাস করেছেন প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীও। ঋত্বিক ঘটক রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল ও রাজশাহী কলেজে পড়েছেন। তিনি রাজশাহী কলেজ এবং মিয়াঁপাড়ার সাধারণ গ্রন্থাগার মাঠে কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে নাট্যচর্চা করেছেন।‌‌‌‌‌ ১৯৪৭ এর ভারত বিভাগের পরে তার পরিবার কলকাতায় চলে যায়।

গৌতম ঘোষ

গৌতম ঘোষ (জন্ম: ১৯৫০) একজন ভারতীয় বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক, সংগীত পরিচালক ও চিত্রগ্রাহক। তিনি মূলত বাংলা চলচ্চিত্রে কাজ করে থাকেন। তিনি চারটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও একটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেছেন। ঘোষ ১৯৫০ সালের ২৪শে জুলাই পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার মাতা স্বান্তনা এবং পিতা হিমাংশু কুমার ঘোষ। তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় সেন্ট জন্‌স ডিওসেসান স্কুলে। তিনি চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত এই বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন এবং এরপর পার্শ্ববর্তী ক্যাথিড্রাল মিশনারি বয়েজ স্কুলে স্থানান্তরিত হন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। গৌতম ঘোষ তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন প্রামাণ্যচিত্র দিয়ে।

ঋতুপর্ণ ঘোষ

ঋতুপর্ণ ঘোষ (জন্ম:৩১শে অগস্ট, ১৯৬৩ - মৃত্যু:৩০শে মে, ২০১৩) ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক। অর্থনীতির ছাত্র ঋতুপর্ণ ঘোষের কর্মজীবন শুরু হয়েছিল একটি বিজ্ঞাপন সংস্থার ক্রিয়েটিভ আর্টিস্ট হিসেবে। ১৯৯২ সালে মুক্তি পায় তার প্রথম ছবি হীরের আংটি। দ্বিতীয় ছবি উনিশে এপ্রিল মুক্তি পায় ১৯৯৪ সালে। এই ছবির জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ কাহিনিচিত্র বিভাগে জাতীয় পুরস্কার পান।ঋতুপর্ণ ঘোষ ছিলেন সত্যজিৎ রায়ের অনুরাগী। দুই দশকের কর্মজীবনে তিনি বারোটি জাতীয় পুরস্কারের পাশাপাশি কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পেয়েছিলেন। ২০১৩ সালের ৩০ মে কলকাতায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়।

অপর্ণা সেন

অপর্ণা সেন (জন্ম: অক্টোবর ২৫, ১৯৪৫) একজন বিখ্যাত ভারতীয় বাঙালি অভিনেত্রী এবং চলচ্চিত্র পরিচালিকা। তিনি অভিনেত্রী কঙ্কনা সেন শর্মার মাতা। অপর্ণা সেন পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় বৈদ্যব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পূর্ব বাংলা থেকে তার পরিবার কলকাতায় আসে। তার বাবা চলচ্চিত্র সমালোচক এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা চিদানন্দ দাশগুপ্ত। তার মা সুপ্রিয়া দাশগুপ্ত সম্পর্কে খ্যাতনামা বাংলা কবি জীবনানন্দ দাশের ভাইয়ের মেয়ে। তিনি তার শৈশব অতিবাহিত করেন় হাজারীবাগ এবং কলকাতা শহরে। তিনি কলকাতার মডার্ন হাই স্কুল ফর গার্লস এ লেখাপড়া করেছেন।তিনি কলকাতার বিখ্যাত প্রেসিডেন্সি কলেজে ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে পড়েছিলেন যদিও ডিগ্রি নেননি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্র "অরণ্যের দিনরাত্রি" (১৯৭০) সহ আরো অনেক চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয় করেন।

কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়

কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় একজন ভারতীয় চলচ্চিত্রের একাধারে পরিচালক, অভিনেতা ও চিত্রনাট্যকার। তিনি ২০০৪ সালে ওয়ারিশ নামের একটি চলচ্চিত্র পরিলাচনার মধ্য দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রের জগতে প্রবেশ করেন। তার শ্রেষ্ঠ সিনেমাগুলো হল বিসর্জন, বিজয়া, ছোটেদের ছবি, নগরকীর্তন ইত্যাদি। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় ১৯৬৮ সালের ৪ অগাস্ট কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তার প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যালয় থেকে। তারপরে তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক পাশ করেন। বিশ্ববিদ্যালয় থাকাকালীন সময় থেকে তিনি থিয়েটার করতেন। এবং সেখানে তার সাথে চূর্ণী গাঙ্গুলির সাথে পরিচয় হয়। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় বিয়ে করেন চূর্ণী গাঙ্গুলিকে। তাদের একমাত্র সন্তানের নাম উজান গাঙ্গুলি।

সৃজিত মুখোপাধ্যায়

সৃজিত মুখোপাধ্যায় বা সৃজিত মুখার্জি (জন্মঃ ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭৭) একজন ভারতীয় বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক, অভিনেতা, চিত্রনাট্যকার, অর্থনীতিবিদ। ২০১০ সালে প্রথম চলচ্চিত্র অটোগ্রাফ পরিচালনার পরপরই তিনি আলোচনায় আসেন। ছবিটি বাণিজ্যিকভাবে সফল হয় এবং সমালোচকদের দ্বারা প্রশংসিত হয়। তার সবগুলো ছবিই সমালোচকদের কাছে প্রশংসিত হয় এবং ব্যাপক সাড়া ফেলে। ৬১তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তার পরিচালিত 'জাতিস্মর' ছবিটি চারটি পুরস্কার জিতে নেয়। ৬২তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অনুষ্ঠানে তার পরিচালিত চতুষ্কোণ সিনেমাটির জন্য তিনি সেরা পরিচালক এবং সেরা চিত্রনাট্য বিভাগে পুরস্কার জিতে নেন। তার পরিচালিত রাজকাহিনী চলচ্চিত্রটি হিন্দিতে বেগম জান শিরোনামে পুনঃনির্মিত হয়েছে যার নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন বিদ্যা বালান। তার নির্মানাধীন চলচ্চিত্র কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন। ২০২০ সালে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম আড্ডা টাইমসে মুক্তি পেয়েছে তাঁর পরিচালনায় সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা সিরিজের অন্তর্গত ছিন্নমস্তার অভিশাপ এবং যত কাণ্ড কাঠমান্ডুতে দুটি গল্প নিয়ে তৈরি ওয়েব সিরিজ ফেলুদা ফেরত ।

অনুলিপিঅধিকার ২০২৩ প্রত্যুষা। সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত